জীবনের অনুমান

𝗠𝘂𝗵𝗮𝗺𝗺𝗮𝗱 𝗢𝗯𝗮𝗶𝗱𝘂𝗹𝗹𝗮𝗵 𝗙𝗮𝗿𝘂𝗸


আমাদের পথ চলতে গিয়ে অনেক সময় অনুমানের উপর নির্ভরতা পায়।সেটা হতে পারে ব্যক্তিজীবন,কর্মজীবন কিংবা সমাজ জীবন।অনুমান বা ধারণা আমাদের নেয়াই লাগে।


কিন্তু সে অনুমান যদি নিজের গন্ডি ছড়িয়ে অন্যের উপর পড়ে,আর সেটি কোনো খারাপ বিষয়ে হয়ে থাকে,তাহলে আমরা এক কথায় বলতে পারি এটি একটি কুধারণা।


সমাজে বসবাসের জন্য এবং বন্ধুত্বের সম্প্রীতির জন্য এই কুধারণা কতটা হুমকিসরূপ হতে পারে তা অজানা কিছু নয়।


কারো সাথে মুক্ত পাখির মত উত্তম ধারণা রেখে চলাফেরা করা আর মন্দ ধারণা নিয়ে চলাফেরা করার মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান থাকে।ততক্ষণ পর্যন্ত মন্দ ধারণা করা যায় না,যতক্ষণ পর্যন্ত প্রমাণ সরূপ কিছু পাবো না।আর মন্দ ধারণা করলেও অপরের মাঝে সে সব কথার কথায় বলে ফেলা আমার মতে আরো জগণ্য কাজ বলে মনে করি।তাই সরাসরি ব্যক্তির সাথে কথা বলে নেয়া উচিত।


আচ্ছা,অনুমান নিয়ে আমাদেরকে ইসলাম কি শিক্ষা দিচ্ছে?আমরা তো কারো ব্যাপারে তিল পরিমাণ কোনো ক্লু ফেলেই মন্দ অনুমান করে বসি।অথচ সূরা হুজরাতে রাব্বে কারীম ইরশাদ করেছেন - ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অনেক রকম অনুমান থেকেই বেঁচে থাকো। কেননা কিছু কিছু অনুমান গোনাহের কারণ হয়।'


কোরআনে যে অনুমান করতে নিষেধ করা হয়েছে তা হচ্ছে অন্যের সম্পর্কে মন্দ ধারণা ও অপবাদ দেওয়া। যে মন্দ বিষয়ের কোনো প্রমাণ নেই, সে বিষয়ে কেবলই অনুমানের ওপর ভর করে কিছু বলে দেওয়াকেই এ আয়াতে বারণ করা হয়েছে। যেমন, কাউকে কোনো অশ্লীল বিষয়ে কিংবা মদ্যপানে অভিযুক্ত করা। আয়াতের দ্বিতীয় অংশ থেকেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়। অনুমান থেকে বেঁচে থাকার আদেশ দেওয়ার পর আল্লাহতায়ালা এর কারণ বলে দিয়েছেন এভাবে- কিছু কিছু অনুমান গোনাহের কারণ হয়। আর এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, মন্দ ধারণা ও অনুমানই গিবত-পরনিন্দা-মিথ্যা অপবাদের মতো জঘন্য গোনাহের পথ করে দেয়।


কারো সম্পর্কে যদি স্পষ্টভাবে জানা যায়, সে কোনো পাপকাজে জড়িয়ে পড়েছে কিন্তু সে ব্যক্তি তা প্রকাশ করেনি এবং প্রকাশ করাকে সে পছন্দও করছে না, তাহলে সে পাপের কথা বলে বেড়ানোই তো মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়ার মতো অপরাধ! এ থেকেই বোঝা যায়, যদি কারো দোষ বলাটা শুধুই ধারণানির্ভর হয় তাহলে তা কত ঘৃণিত কাজ হবে!


অনেক সময় মন্দ ধারণা ব্যক্তি, পরিবার এমনকি সমাজে মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনে।এমন একটি ঘটনা হযরত আয়েশা (রা) এর সাথে ঘটেছিল।যা সম্পর্কে মুনাফিক আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই কুধারণা নিয়ে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিল।যে ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে পুরো মদিনা অঞ্চলে শোকের মাতাম নেমে পড়েছিল।পরবর্তীতে ঘটনার সত্যতা উন্মোচন হয়।


এমন গৃণিত কাজ গুলো থেকে আমরা সব সময় নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারি।কেননা চুপ থাকার মধ্যে আল্লাহ উত্তম জাযাহ দান করেন।আর আমরা কেউ অপরাধ করলেও যদি সেটি ব্যক্তিগত ভাবে সংশোধন করি,তাহলে সমাজটা সুন্দর হবে।ভ্রাতৃত্ব বেড়ে উঠবে।কলহ দ্বন্দ্ব বন্ধ হবে। গীতিকার আব্দুস সালামের গানটি এখানেই মনে পড়ে -


আরেকজনের দোষ খুঁজতেই

ব্যস্ত সে যে সব সময়

নিজের দোষের পাইনা হদিস

মানবে না ভুল তার হয়

আরেকজনের নিন্দা করে

জিন্দা করে পাব যে তার।।


নিজের মতের মিল খুঁজতে

যারা থাকে একরোখা

তাদের চোখে তিনি চালাক

অন্যরা সবাই বোকা

দূর করে দাও মন থেকে সব

হিংসা গীবত অহংকার।


ঢাকা।

২২.০৮.২৩ইং



Comments

Popular posts from this blog

একটি রাত খুঁজছি || মুহাম্মদ ওবাইদুল্যাহ্ ফারুক ||লাইলাতুল কদর

শ্রাবণের বন্ধু