নীল পাঞ্জাবী

 নীল পাঞ্জাবী

মুহাম্মদ ওবাইদুল্লাহ্ ফারুক


বছরে দুটি দিন মুসলমানের জন্যে সবচেয়ে বেশি আনন্দের হয়।এক হলো ঈদুল ফিতর,অন্যটি ঈদুল আজহা।ঈদুল ফিতরে শিশু কিশোরদের আনন্দটা থাকে অন্য রকমের।সব রোজা রাখা,রোজার মধ্যে ঈদের শপিং করা।নতুন জামা কাপড় পড়ে বন্ধুরা মিলে হাসি খুশি তে ঈদের কোলাকালি,আর সালাম বিনিময় করা।ধনী গরীব সকলের কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে এক হওয়া।গত বছরের ন্যায় এবছর ঈশিতার নতুন প্ল্যান যোগ করল।এবার ঈদে ঈশিতার নীল জামা পড়বে বলে দেয় ভাইয়াকে।


বছর কয়েক আগে ঈশিতার বাবা মারা যায়। তখন ঈশিতার বয়স ছিল মাত্র আড়াই বছর।তখন ঈশিতা বুঝতে পারে নাই বাবা মারা যাওয়ার বেদনা কি?সে মনে করত,বাবা শহরে চাকরী করতেছে।এ টুকু বাচ্ছা চাকরী বা আর বুঝবে কি?


গ্রামের বাড়িতে মাকে নিয়ে ঈশিতা থাকে।ঈশিতা,তার বড় ভাই আর মাকে নিয়ে এখন পরিবারের সদস্য।বাবা মারা যাওয়ার পরই পরিবারের হাল ধরতে হয়েছে রোহানকে।শহরে পড়ালেখার পাশাপাশি রোহান চাকরীও করছে।মেধার জোরে পাবলিক ভার্সিটি তে চান্স পেয়েছে।তাই পড়ার খরচও একটু কম পড়ে।যদিও রোহানের জন্যে সে টাকাও বহন করতে হিমসিম খেতে হয়।এখন মোটামোটি শীতল।সব সামলিয়ে নিতে পারছে।


রোজা রেখে অফিস করা,পড়তে বসা,আবার একটা টিউশন করানো খুবই কষ্ট হচ্ছে রোহানের।পরিবারের জন্যে তাকে নিজের সুখ গুলো ভুলে যেতে হয়েছে।একমাত্র ছোট বোন ঈশিতা দশ ই রমজানে ফোন করে বলছিল,"ভাইয়া!এবার ঈদে আমার জন্যে একটা নীল রঙ্গের জামা কিনে দিতে হবে।"


রোহান মিষ্টি করে বলল,ঠিক আছে আপু।আমি আপনার কথা রাখার চেষ্টা করব (আদর করে আপু ডাকে)।আর কিছু লাগলে বলে দিয়েন।


ঈদের আর মাত্র ৭ দিন বাকী।রোহানের অফিস থেকে রোহানকে অগ্রিম ছুটি দিয়ে দিল।কেনা কাটা করতে শপিং কমপ্লেক্সে গিয়েছে।মোটামোটি কিছু টাকা পেয়েছে।তাই এবার মা আর ছোট বোনটির জন্যে ভাল করে শপিং করবে।


ছোট বোনের জন্যে সোনালী রঙ্গের ফিতা ওয়ালা এক জোড়া জুতা ৮৯০ টাকা দিয়ে,নীল রঙ্গের একটা জামা কিনল ১৫০০ টাকা দিয়ে,রাফ ইউস করার জন্যে ৮০০ টাকা দিয়ে একটা কটন কাপড়ের জামা কিনল।বোনের সাঁজের জন্যে চুড়ি,মেহেদী সহ আরো অনেক কিছু কিনল।


এবার মায়ের শপিং এর জন্যে একটা ভাল দোকানে গেল।একটা জলপাই কালারের সুন্দর শাড়ি কিনল।আরো যা যা দরকার সব ক্রয় করল।বাড়িতে ঈদের কিছু বাজার করাও লাগবে।


শপিং আর বিভিন্ন অর্গানাইজেশন এর ইফতার মাহফিলে যোগ দিতে দিতে ২৭ ই রমজান শেষ।পরদিন গ্রামের বাড়িতে ফেরা।একমাত্র বোন আর মা আশা নিয়ে বসে আছে।সারাদিন কেটে গেল,রোহান আসছে না দেখে ছোট বোনটি ভেজা চোখে মাকে বার বার জিজ্ঞেস করছে।এদিকে ফোনের সুইচ অফ পাচ্ছে।অবশেষে রোহানের বাড়ি ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই।বাড়ির দরজার সামনে বেল এর আওয়াজ শুনতে পেয়ে ঈশিতা দৌড়ে গিয়েছে।ভাইকে দেখে;

-এত দেরি কেন করলা ভাইয়া?তোমার ফোন অফ কেন?আমাদের কি চিন্তা হয় নাই?

-সব উত্তর এখন দিতে হবে নাকি ইফতার করার পর দিলে চলবে আপু?

-(হেসে হেসে)না থাক,আস আগে ইফতার করে নাও।তারপর সব শুনে নিব।

-এই তো আমার লক্ষী বোন।

তখনি রোহানের মা কাছে চলে আসছে.....

-রোজার দিনে সারাদিন উপোসে জার্নি করে আসছিস বাবা।তোর কোন কষ্ট হয় নিই তো বাবা?

-না মা,কোন কষ্ট হয় নাই।


ইফতার করতে করতে বোনের সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে।

রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম।মোবাইল টা রাতে চার্জে দিতে পারি নাই।ঐ জন্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।..........


মাগরিবের নামাজ শেষ করে এলাকার অনেকের সাথে রোহানের সাক্ষাত।এরপর বাড়িতে আসলে বোনের আবার প্রশ্ন,তবে এবার ঈদের আবদারের প্রশ্ন।


রোহান প্রথমে ঈশিতার ঈদের জামা কাপড় গুলো দেখাল।তারপর মায়ের গুলো। ঈশিতা দেখে তো খুশিতে আত্মহারা।মনের মত জামা।মায়েরও পছন্দ হয়েছে বেশ।

এক স্যুট পাঞ্জাবি আর পায়জামা দেখে ঈশিতা বলছে ভাইয়া তোমার পাঞ্জাবি কিন্তু আমার জামার চাইতেও সুন্দর। তোমাকে খুব মানাবে।

রোহান হেসে বলে উঠল,এটা আমার জন্যে নারে পাগলী।তবে আমার টিউশনি থেকে স্টুডেন্ড এর আম্মু গিফট করেছে।ভাল দামও পড়েছে।

ঈশিতা : তাহলে কার জন্যে?

রোহান: এটা ছোট মামা কে দিব।মামারা তো আমাদের জন্যে অনেক কিছু করছে।কিন্তু সবাইকে তো আর আমি দিতে পারব না।তাই এটা ছোট মামার জন্যে।বড় মামারা তো নিবেন না।

মা:ভাল হয়েছে বাবা।

ঈশিতা:ঠিক আছে তোমার টা দেখাও।

রোহান:আমি আসলে সময় পাইনি কেনার জন্যে।তাছাড়া আমার তো পাঞ্জাবি আগে থেকে কিনা আছে।গত বছরের আগের বছরের পাঞ্জাবি টা এখনো নতুন আছে।ঐটাই পড়ব।তাই এবার আর কিনি নাই।


ঈশিতা চোখে পানি টলমল করছে।মন খারাপ করে কান্না জড়িত ভাবে বলছে "তোমার তো নিজের জন্যে কেনার সময় হবে না,আমি আগে থেকেই জানতাম।গত বছরও তুমি সেই একই কথা বলেছ।আমার জন্যে এত কিছু কিনার দরকার ছিল না।"

রোহান:দেখেছ মা,তোমার মেয়ে আমার সাথে কি ঝগড়া করতেছে।

মায়ের মুখে কোন কথায় নাই,চাপা কান্নাতে বুক ফেঁটে যাচ্ছে।চোখে পানি ঝলঝল করছে।ঈশিতা তখনি আলমারি থেকে একটা শপিং ব্যাগ রোহানের হাতে দিয়ে বলল,নে ধর।কখনো কিনবি না যে আমি জানি।তাই টিফিনের টাকা থেকে রোজ বাঁচিয়ে এ প্যাকেট টা ক্রয় করেছি।


রোহান ব্যাগ থেকে একটা নীল পাঞ্জাবি বের করল,আর মা এবং ছোট বোনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদো কন্ঠে বলছে,"আমি তোমাদের জন্যে কিছুই করতে পারছি না মা।"


১৪.০৬.২০১৮ ইং

সন্দ্বীপ,চট্টগ্রাম।

Comments

Popular posts from this blog

একটি রাত খুঁজছি || মুহাম্মদ ওবাইদুল্যাহ্ ফারুক ||লাইলাতুল কদর

শ্রাবণের বন্ধু