অন্যরকম ভাবনায় শিক্ষকের প্রেম

𝕄𝕦𝕙𝕒𝕞𝕞𝕒𝕕 𝕆𝕓𝕒𝕚𝕕𝕦𝕝𝕝𝕒𝕙 𝔽𝕒𝕣𝕦𝕜.



মহান এক পেশার নাম "শিক্ষকতা"।একজন শিক্ষার্থীকে কেবল মাত্র শিক্ষিতই নয়,বরঞ্চ ভালো মানুষ করে গড়ে তোলার গুরুদায়িত্বটা থাকে শিক্ষকের উপরই।আর এই শিক্ষার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষকের।নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছিলেন - "আমাকে শিক্ষিত মা দাও,আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দেব।"


কিন্তু সম্প্রতিকালে শিক্ষক আর ছাত্রীর মাঝে শিক্ষার মান বিরাজের সাথে সাথে অবৈধ এক সম্পর্কের মান বিরাজ করছে।এসব তো এখন স্যোসাল মিডিয়ার হিট করা লিংক থাকে।গেল কিছুদিন আগেও রাজধানীর নামকরা এক কলেজ শিক্ষক ও এক শিক্ষার্থীর গোপন কথোপকথন ও ব্যক্তিগত ছবি ফাঁস হয়েছিল।কোনো শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থীরা কিছুতেই বুঝতে পারেনি তাদের মধ্যে এত গভীর সম্পর্ক চলছিল।যেন ভাঁজা মাছ উল্টিয়ে খেতে পারছে না।


নওগাঁ জেলার এক স্কুলের গ্রন্থগার পদের শিক্ষক।বই আদান প্রদানের মাধ্যমে ছাত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন।পরে বিষয়টি অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে জানাজানি হয়।


চট্টগ্রামে ছাত্রীর সাথে গোপনে প্রেম করে পরিবারের কাছে শিক্ষক বিয়ে প্রস্তাব দেয়।প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ছাত্রীসহ পালিয়ে যায়।


ঘটনা গুলো এখানেই শেষ নয়।বিভিন্ন কোচিং সেন্টার,টিউশন মাষ্টারের মাঝেও এই স্বভাব পরিলক্ষিত করা যায়।আবার শুধু স্কুল কিংবা কলেজকেও দোষারোপ করা যায় না।খতিয়ে দেখলে মাদ্রাসা গুলোতেও অহরহ পাওয়া যাবে।এমন বুজুর্গী ভাব নিয়ে থাকেন,যেন মাদ্রাসা শিক্ষক তার তথাকথিত ছাত্রীকে চিনেনও না।তার সাথে কোনো সম্পর্কই নাই।সত্য কখনো চাপা থাকে না।দেয়ালেরও কান আছে।


এসব নিকৃষ্ট ঘটনাবলি মানুষের মুখে মুখে প্রায়ই লেগে থাকে।শিক্ষকদের প্রতি আস্তাও উঠে যায়।আর কোনো শিক্ষকের সাথে ছাত্রীর বিয়ে হলে তো কথাই নাই।নানা রকম অপপ্রচার তৈরি হয়ে আজীবন কথা থেকে যায়।শুধু মাত্র গুটিকয়েক অপ্রীতিকর ঘটনার কারণে।


এ সমস্ত শিক্ষক শিক্ষার্থীর অবৈধ সম্পর্ক থেকে মুক্ত রাখার জন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিভিন্ন সেমিনারের মাধ্যমে সচেতন করা যেতে পারে।বিশেষভাবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলো।


ইসলাম মানব জাতির চরিত্রের হিফাজতের জন্য নারী পুরুষকে বিবাহের নির্দেশ দিয়েছে এবং বিবাহ বহির্ভূত যাবতীয় সম্পর্ক হারাম ও এর ভয়ঙ্কর শাস্তির কথা জানার পরেও কিছু শিক্ষক/ হুজুরগণ এহেন জগণ্য কাজে লিপ্ত হয়।


সুরা মুনাফিকুনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। আর যারা এরূপ করে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।’ 


এই আয়াতে কারীমে যাদের ভালোবাসা জায়েজ ও ইবাদত তাদের ব্যাপারে বলা হচ্ছে যে তারা যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। তাহলে যে সম্পর্কগুলো মহান আল্লাহ হারাম করেছেন, সেই সম্পর্ক যদি কাউকে আল্লাহর জিকির থেকে গাফেল করে দেয়, তবে তা কতটা জঘন্য হবে? আল্লাহ হেফাজত করুন।


 পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ। 


তাই কাউকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যেও তার সঙ্গে বিবাহপূর্ব প্রেম নামে যে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে, তা করার কোনো অবকাশ নেই। প্রশ্ন জাগতে পারে, অনেকের ক্ষেত্রে তা হয়তো শারীরিক সম্পর্কে না-ও গড়াতে পারে, সে ক্ষেত্রেও কি তা হারাম হবে? তার উত্তর খোঁজার জন্য এই হাদিসগুলোতে চোখ বুলানো যেতে পারে।


হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, চোখের ব্যভিচার হলো দেখা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো কথা বলা (যৌন উদ্দীপ্ত কথা বলা)। (বুখারি, হাদিস) 


অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, দুই চোখের ব্যভিচার হলো, (বেগানা নারীর দিকে) তাকানো, কানের ব্যভিচার যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের ব্যভিচার আবেগ উদ্দীপ্ত কথা বলা, হাতের ব্যভিচার (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশ্যে) স্পর্শ করা আর পায়ের জিনা ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হওয়া এবং মনের ব্যভিচার হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। (মেশকাত, হাদিস : ৮৬)


এই "চাওয়া ও প্রত্যাশা" কে আমরা প্রায় সবাই করি।অনেকে তো নামাজ পড়ে দু'আ করি।


মানুষ যখন প্রেমে পড়ে, তখন সে তার মনের মানুষকে না দেখে থাকতে পারে না। সে দূরে থাকলেও কমপক্ষে তার ছবি দেখে, অথবা তার সঙ্গে ফোনে কথা বলে, কমপক্ষে তাকে নিয়ে স্বপ্নের বাসরে হারিয়ে যায়, যার প্রতিটি স্তরকেই উল্লিখিত হাদিসগুলোতে হারাম বলা হয়েছে। বিয়ে করার দৃঢ় সংকল্প থাকলেও কোনো বেগানা নারীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা হারাম। আর বেশির ভাগ প্রেমের শেষ পরিণতিই হয় বিচ্ছেদ, ধোঁকা। এটি শয়তানের মরীচিকা।


এই শয়তানি ধোঁকা থেকে নিজে ও অপরকে বাঁচাতে,সেই সাথে বিদ্যাপীঠের সুনাম রক্ষার্থে বিভিন্ন সেমিনারের মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষককে সচেতন করা দরকার।মহান শিক্ষকের ভিতরে শয়তানের কালো ছাঁয়াকে দাফন করা উচিত।কবি আবদুশ শাকুর তুহিন ভায়ের একটা লেখা মনে পড়ে -


মনের কোনে যদি শয়তানী সুর 

রিনিঝিনি রিনিঝিনি বাজায় নুপুর,

বাবুই পাখির মতো জোনাকী ধরো 

দেখবে আলোয় ভোরে গেছে মনপুর।


কাকের মতো করে ময়লা কুড়াও 

জীবন থেকে সেসব উড়াও উড়াও। 

সজীব সতেজ হবে মনের যমিন 

ঐশী বাতি যদি দাওগো জ্বেলে।


ঢাকা।

৩১.০৮.২৩ ইং

Comments

Popular posts from this blog

একটি রাত খুঁজছি || মুহাম্মদ ওবাইদুল্যাহ্ ফারুক ||লাইলাতুল কদর

শ্রাবণের বন্ধু